ওয়ালরস্টাইন বলেছেন, পৃথিবী তিন ভাগে বিভক্ত। সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ হচ্ছে ‘সেন্টার’, যা গঠিত হয় উন্নত রাষ্ট্রগুলো দিয়ে। সবচেয়ে দুর্বল অংশ হচ্ছে ‘পেরিফেরি’, যেখানে দরিদ্র দেশগুলো অবস্থান করে। আর মাঝখানের জায়গাটা হচ্ছে ‘সেমি–পেরিফেরি’, যার প্রায় সব কটি রাষ্ট্র ‘পেরিফেরি’ থেকে উঠে এসে অনিবার্যভাবে যত দ্রুত সম্ভব ‘সেন্টারের’ দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এখন দেখা যাক, যে উন্নত রাষ্ট্রটি ‘সেন্টারে’ যায়, তা কীভাবে যায় বা টিকে থাকে। ওয়ালরস্টাইন বলছেন, তার আসল জোরটা শিক্ষায়, গবেষণায়, আবিষ্কারে। তারা এসব ক্ষেত্রে প্রভূত বিনিয়োগ করে বাজারে একেবারে আনকোরা নতুন পণ্য ছেড়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে। একচেটিয়া ব্যবসার থলথলে মুনাফা ছাড়া ‘কেন্দ্রে’ টিকে থাকা যায় না। ফলে, নতুন পণ্যটির উৎপাদন-কলাকৌশল যখন জানাজানি হয়ে যায়, তখন তাদের আরেকটি পণ্য আবিষ্কার করতে হয়। সে জন্য সেখানে শিক্ষায় বিপুল বিনিয়োগ একটি অনিবার্য ও নিরন্তর প্রক্রিয়া।
উল্টো দিকে কিছু রাষ্ট্র ‘পেরিফেরিতে’ পড়ে থাকে, কারণ তাদের অদক্ষ শ্রম ও সামান্য কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়া বলতে গেলে আর কিছুই নেই। তবু এখান থেকে কিছু রাষ্ট্র যে ‘সেমি–পেরিফেরিতে’ যেতে পারে, তার কারণ তাদের শ্রমদক্ষতার উন্নয়ন। শ্রমদক্ষতার পূর্বশর্ত যেহেতু শিক্ষা, তাই যারাই ‘সেমি-পেরিফেরিতে’ গেছে বা যেতে চাইছে, তারাই সাধ্যমতো বা কখনো সাধ্যের বাইরে গিয়ে শিক্ষায় বিনিয়োগ করছে। যেমন: মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কিউবা ইত্যাদি। এমনকি সৌদি আরবের মতো দেশ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বাজেটের বৃহদংশ ব্যয় করে শিক্ষায়। এ তো গেল বাংলাদেশের চেয়ে যাদের জিডিপির আকার বড়, তাদের কথা। বাংলাদেশের চেয়ে দরিদ্র অনেক দেশও এ ব্যাপারে অনেক এগিয়ে গেছে। যেমন: উগান্ডা তার বাজেটের ১৬ শতাংশ, টোগো ১৭, বুরুন্ডি ২২, লেসেথো ২৪ ও তাঞ্জানিয়া ২৬ শতাংশ শিক্ষার জন্য ব্যয় করে। অথচ বাংলাদেশ, যা ২০২১ সালে ‘সেমি-পেরিফেরিতে’ ঢোকার আশা করে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করেছে তার বাজেটের মাত্র ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা জিডিপির ২ শতাংশ।
এখন দেখা যাক, যে উন্নত রাষ্ট্রটি ‘সেন্টারে’ যায়, তা কীভাবে যায় বা টিকে থাকে। ওয়ালরস্টাইন বলছেন, তার আসল জোরটা শিক্ষায়, গবেষণায়, আবিষ্কারে। তারা এসব ক্ষেত্রে প্রভূত বিনিয়োগ করে বাজারে একেবারে আনকোরা নতুন পণ্য ছেড়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে। একচেটিয়া ব্যবসার থলথলে মুনাফা ছাড়া ‘কেন্দ্রে’ টিকে থাকা যায় না। ফলে, নতুন পণ্যটির উৎপাদন-কলাকৌশল যখন জানাজানি হয়ে যায়, তখন তাদের আরেকটি পণ্য আবিষ্কার করতে হয়। সে জন্য সেখানে শিক্ষায় বিপুল বিনিয়োগ একটি অনিবার্য ও নিরন্তর প্রক্রিয়া।
উল্টো দিকে কিছু রাষ্ট্র ‘পেরিফেরিতে’ পড়ে থাকে, কারণ তাদের অদক্ষ শ্রম ও সামান্য কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়া বলতে গেলে আর কিছুই নেই। তবু এখান থেকে কিছু রাষ্ট্র যে ‘সেমি–পেরিফেরিতে’ যেতে পারে, তার কারণ তাদের শ্রমদক্ষতার উন্নয়ন। শ্রমদক্ষতার পূর্বশর্ত যেহেতু শিক্ষা, তাই যারাই ‘সেমি-পেরিফেরিতে’ গেছে বা যেতে চাইছে, তারাই সাধ্যমতো বা কখনো সাধ্যের বাইরে গিয়ে শিক্ষায় বিনিয়োগ করছে। যেমন: মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কিউবা ইত্যাদি। এমনকি সৌদি আরবের মতো দেশ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বাজেটের বৃহদংশ ব্যয় করে শিক্ষায়। এ তো গেল বাংলাদেশের চেয়ে যাদের জিডিপির আকার বড়, তাদের কথা। বাংলাদেশের চেয়ে দরিদ্র অনেক দেশও এ ব্যাপারে অনেক এগিয়ে গেছে। যেমন: উগান্ডা তার বাজেটের ১৬ শতাংশ, টোগো ১৭, বুরুন্ডি ২২, লেসেথো ২৪ ও তাঞ্জানিয়া ২৬ শতাংশ শিক্ষার জন্য ব্যয় করে। অথচ বাংলাদেশ, যা ২০২১ সালে ‘সেমি-পেরিফেরিতে’ ঢোকার আশা করে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করেছে তার বাজেটের মাত্র ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা জিডিপির ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ২০২১ ও ২০৪১ সালে যথাক্রমে ‘সেমি–পেরিফেরি’ ও ‘সেন্টারে’ যাওয়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং শিক্ষা-বিনিয়োগও বাড়াচ্ছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, তা জিডিপির আকার অনুযায়ী বাড়ছে না। ২০০৯-১০ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল বাজেটের ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ, সেখান থেকে পরের বছর কমে হলো ১৩ দশমিক ৬১, তারপর ক্রমান্বয়ে ১৩ দশমিক ১৩, ১২ দশমিক ৩২, ১১ দশমিক ৫৮, ১১ দশমিক ৭ এবং সর্বশেষ এ বছর তা কমে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৭ শতাংশে।
ফলে বলা যায়, অর্থনৈতিক অগ্রগতির তুলনায় শিক্ষায় বিনিয়োগ ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে।
এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, তাতে কী এমন ক্ষতি হচ্ছে? শিক্ষার যেটুকু উন্নতি হচ্ছে, তাতেই তো নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। খাঁটি কথা। কিন্তু ভবিষ্যতে কি এই গতি ধরে রাখা যাবে? জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাবে না। তাঁদের মতে, সন্তোষজনক অগ্রগতি চাইলে, অর্থাৎ একটি দেশের জনশক্তিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে চাইলে তার জিডিপির ৬ শতাংশ বা বার্ষিক বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় করা উচিত। এর কম হলেই যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে না তা নয়—বাংলাদেশ তার প্রমাণ—কিন্তু টেকসই উন্নয়ন চাইলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সমান্তরালভাবেই শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, তাতে কী এমন ক্ষতি হচ্ছে? শিক্ষার যেটুকু উন্নতি হচ্ছে, তাতেই তো নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। খাঁটি কথা। কিন্তু ভবিষ্যতে কি এই গতি ধরে রাখা যাবে? জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাবে না। তাঁদের মতে, সন্তোষজনক অগ্রগতি চাইলে, অর্থাৎ একটি দেশের জনশক্তিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে চাইলে তার জিডিপির ৬ শতাংশ বা বার্ষিক বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় করা উচিত। এর কম হলেই যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে না তা নয়—বাংলাদেশ তার প্রমাণ—কিন্তু টেকসই উন্নয়ন চাইলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সমান্তরালভাবেই শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
(গোলাম ফারুক: ফলিত ভাষাতত্ত্ববিদ, গবেষক, অধ্যাপক।)
Collection :
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন