মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৫

বার্সার দুঃসময় ....



১৯২৫ সালের ১৪ জুন, বর্তমানে ন্যু ক্যাম্প
স্টেডিয়ামের দর্শকগন স্পেনের জাতীয়
সঙ্গীতের ব্যঙ্গ করে এবং ‘‘God Save The
King’’ সঙ্গীতের
প্রতি সম্মান জানিয়ে মিগুয়েল প্রিমো দে
রিভেরার একনায়কতন্ত্রের স্বতঃস্ফূর্ত
প্রতিবাদ জানায়। এর ফলে,
স্টেডিয়ামটিকে প্রতিহিংসামূলকভাবে
ছয় মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং
গাম্পারকে পরিচালকের পদ হতে সরে
যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। ১৯২৬ সালে,
ক্লাবের পরিচালনা পরিষদ ক্লাবটিকে
প্রথমবারের মত পেশাদার ক্লাব হিসেবে
ঘোষনা করে।
.
১৯২৮ সালে বার্সেলোনা কোপা দেল রে
শিরোপা জিতে। ‘‘Oda a Platko’’ নামক একটি
কবিতা আবৃতি করার মাধ্যমে তারা এই জয়
উত্যাপন করে। কবিতাটি লিখেছিলেন
রাফায়েল অ্যালবার্তি, যিনি
বার্সেলোনার গোলরক্ষকের
দূর্দান্ত নৈপূন্যে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত ও আর্থিক সমস্যার কারনে
জোয়ান গাম্পার বিষন্ন হয়ে পড়েন। ১৯৩০
সালের ৩০ জুলাই, তিনি আত্মহত্যা করেন।
.
খেলাধুলার উপর রাজনৈতিক প্রভাব
পড়তে শুরু করলেও ক্লাবটি ১৯৩০, ১৯৩১,
১৯৩২, ১৯৩৪, ১৯৩৬ ও ১৯৩৮ সালে
কাতালান কাপ জিতে। ১৯৩৬ সালে
স্পেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাস পর
বার্সেলোনা ও অ্যাথলেতিক বিলবাও -
এর কয়েকজন খেলোয়াড়কে সামরিক
অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এমন
ব্যক্তিদের সাথে তালিকাভুক্ত করা হয়।
.
৬ আগস্ট, ক্লাব প্রেসিডেন্ট ইয়োসেপ
সানিওলকে হত্যা করে স্পেনের
রাজনৈতিক দল ফালাঞ্জের সেনারা।
ইয়োসেপ সানিওল ছিলেন কাতালানদের
স্বাধীনতার স্বপক্ষে।
.
১৯৩৭ সালের গ্রীষ্মে, বার্সেলোনা
মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্র সফর করে। এই
সফর ক্লাবটিকে অর্থনৈতিক সমস্যা
থেকে মুক্তি দেয়। ১৯৩৮ সালের ১৬ মার্চ,
বার্সেলোনাতে বিমান হামলা
চালানো হয়। এতে তিন হাজারেরও
বেশি প্রাণহানি ঘটে। এমনকি একটি
বোমা ক্লাবের অফিসেও আঘাত হানে।
কয়েক মাস পর, কাতালোনিয়া
দখলদারিত্বের অধীনে আসে। গৃহযুদ্ধ
শেষে কাতালান পতাকা বাতিল করে
দেওয়া হয় এবং ক্লাবগুলোর অ-স্পেনীয়
নাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে ফুটবল
ক্লাব বার্সেলোনার নাম পরিবর্তন করে
রাখা হয় ‘‘ক্লাব দে ফুটবল বার্সেলোনা’’
এবং তাদেরকে কাতালান পতাকাও
সড়িয়ে ফেলতে হয়।
.
১৯৪৩ সালে, কোপা দেল রে-এর
সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের
মুখোমুখি হয় বার্সেলোনা। প্রথম লেগের
খেলায় লেস কোর্তস্ স্টেডিয়ামে
বার্সেলোনা ৩–০ ব্যবধানে জয় লাভ
করে। দ্বিতীয় লেগের খেলা শুরু হওয়ার
কিছুক্ষণ পূর্বে স্পেনের রাষ্ট্রীয়
নিরাপত্তা প্রধান বার্সেলোনার
ড্রেসিং রুমে প্রবেশ করেন। তিনিম
খেলোয়াড়দেরকে মনে করিয়ে দেন যে
তারা শুধুমাত্র শাসকদের উদারতার
কারনে খেলতে পারছেন। খেলায় রিয়াল
মাদ্রিদ ১১–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।
.
রাজনৈতিক দূরবস্থা সত্বেও, ১৯৪০ ও ১৯৫০
এর দশকে বার্সেলোনা তাদের সফলতার
ধারা বজায় রাখে। ১৯৪৫ সালে, ইয়োসেপ
সামিতেরের মত ম্যানেজার এবং
সিজার রামালেতস ও ভালেস্কোর মত
খেলোয়াড়দের নিয়ে বার্সেলোনা লা
লিগা শিরোপা জিতে। ১৯২৯ সালের পর
এটিই ছিল তাদের প্রথম লা লিগা
শিরোপা। ১৯৪৮ এবং ১৯৪৯ সালেও তারা
লা লিগা শিরোপা জিতে। ঐ বছর তারা
কোপা লাতিনা শিরোপাও জিতে। ১৯৫০
সালের জুনে, বার্সেলোনা লাদিসলাও
কুবালার সাথে চুক্তি করে।
.
১৯৫১ সালে একটি বৃষ্টিবহুল রবিবারে,
সান্তেনদারের বিপক্ষে খেলায়
বার্সেলোনা ২–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে।
খেলা শেষে লেস কোর্তস্ স্টেডিয়ামের
দর্শকগন কোন ট্রামগাড়ী
না নিয়ে পায়ে হেঁটে রওনা দেয়। যা
ফ্রাংকো কর্তৃপক্ষের কাছে ছিল বিস্ময়কর।
বার্সেলোনায় একটি ট্রাম ধর্মঘট সংঘটিত
হয়, যা বার্সেলোনা
সমর্থকদের সমর্থন পেয়েছিল। এ ধরণের আরও
অনেক ঘটনা ক্লাবটিকে কাতালোনিয়ার
প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত করে তোলে।
অনেক প্রগতিশীল
স্পেনীয় নাগরিক ক্লাবটিকে অধিকার ও
স্বাধীনতার রক্ষাকারী হিসেবে দেখতে
থাকেন।
(Collected)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন