শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫

প্রজাপতির জন্মস্থানে আমি:

অনেকক্ষন ধরে খেয়াল করছি ড্রাইভার সাহেবের ওভারটেকিং টেন্ডেন্সি প্রবল।যেকোন সময় এক্সিডেন্ট ঘটতে পারে।এবং ঘটলও তাই।বাস থেকে নেমে মিনিবাসে ভাটিয়ারী পর্যন্ত গিয়ে সিএনজিতে প্রাকৃতিক শোভা দেখতে দেখতে পৌছালাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক আপন মনে হয় কিছু কারণে।প্রথমত, বাবা পড়াশোনা করে গেছেন।দ্বিতীয়ত, ভর্তি পরীক্ষায় ভুলক্রমে সেট কোড ফিলাপ করতে না পারায় আকর্ষণ আরও বেড়ে গিেয়ছে।মানুষ যেটা পায়না তার প্রতি দুর্বার আকর্ষণ থাকে।তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, প্রজাপতির জন্মস্থান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার আগেই প্রজাপতির জন্মস্থান ভালো করে দেখে নিলাম।আয়তনে বিশাল ক্যাম্পাস হওয়ায় বুঝতে পারলাম না কোন দিক দিয়ে সূর্যসেন হলে এসেছি।ফরেস্ট্রির ছাত্র আমার বন্ধু মুগ্ধ তার রুমে নিয়ে গেল।বিকেলে ঘুরতে বের হলাম।সূর্যসেন হল থেকে হাঁটতে হাঁটতে জিরো পয়েন্ট হয়ে শাটল স্টেশনের সামনে ক্যাম্পাস ক্যাফে তে বসলাম।প্রজাপতির অপেক্ষায় বসে আছি।কফি পান দীর্ঘায়িত করছি ইচ্ছা করেই।এক বুক আশা নিয়ে বসে আছি শত মাইল পাড়ি দিয়ে আসা এই ক্লান্ত পথিক।নাহ!! প্রজাপতি আসে নি।আসবেনা।সাধারণত, একটি ছেলে প্রেমে পড়ার সাথে সাথে প্রেমিকাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করে।আমি কোন স্বপ্ন দেখিনি।আমি জানি কোন স্বপ্ন পূরণ হবে না।সেখানে প্রজাপতির কাছে কিছু প্রত্যাশা করা অনর্থক।আমি জীবনে অনেকের প্রজাপতিকে দেখেছি।নিজের প্রজাপতিকে কখনো দেখিনি।আমি এও জানি তাকে কোনদিন পাব না।হারিয়ে ফেলার আগে এক পলক দেখার ইচ্ছা ছিল মৃত্যুপথযাত্রীর শেষ ইচ্ছার মত।প্রজাপতি আমার শেষ ইচ্ছা পূরণ করেনি।ক্যাম্পাসে সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে শরীর অবশ হয়ে আসছে। আমার বন্ধু আমাকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখাল।আমি অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছি, যেন কিছুই হয় নি।শহীদ মিনারে বসে কিছুক্ষন গল্প করে আবার ফিরে আসলাম হলে।ব্রেইনের নিউরোসার্কিটে একটি বাক্য বারবার স্পার্ক করছে।সেটি হল, তোমার ভালোবাসা প্রজাপতিকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারেনি।
অনেকক্ষন প্রজাপতির জন্মস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।মনকে চরম বিষন্নতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি যাতে মন হঠাৎ ভালো হয়ে যায়।কারণ, আমাকে অনেক দূর যেতে হবে।....ট্রেন চলছে।মাথায় হাজারো চিন্তা।মন বিষাদগ্রস্ত।যাত্রীবাহী লঞ্চ সুরভী-৭ ভেসে চলছে নদীর বুকে।মন কিছুটা ভালো এবং শান্ত হল।ক্লান্ত শরীর, মন নিয়ে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলাম।বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর হল আমাকে পরম মমতায় আশ্রয় দিল।বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।মস্তিষ্ক তখনো পুরোপুরি অচেতন হয়নি।ঘোরের মধ্যে আছি।ঘোরের মধ্যে আমার কিছু প্রিয় মানুষের কথা মনে হলো, যারা আমাকে ভালোবাসে।আমাকে বিশ্বাস করতে হলো, 'ভালোবাসা' এখনো বিদ্যমান এই পৃথিবীতে।কিন্তু, প্রজাপতিকে ভালোবাসার সবগুলো নীলপদ্ম দিয়ে আমি শূণ্যহাতে বসে আছি।থাক!!আমার আর কোন পিছুটান রইল না।ঘুমের মাঝেই মনে হলো, জীবনটা খারাপ না তো!!!
By: 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন